পিত্তথলিতে পাথর (Gallstones): কারণ ও চিকিৎসা
পিত্তথলিতে পাথর (Gallstones): কারণ ও চিকিৎসা
কারণ:
পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার প্রধান কারণ হলো পিত্তরসের উপাদানগুলোর (কোলেস্টেরল, পিত্ত লবণ, বিলিরুবিন) ভারসাম্যহীনতা। এর ফলে পিত্তরসে কঠিন কণা তৈরি হয়, যা পাথরে রূপ নেয়। নিচে প্রধান কারণগুলো উল্লেখ করা হলো:
- কোলেস্টেরলের অতিরিক্ত উপস্থিতি:
- পিত্তরসে কোলেস্টেরল বেশি হলে এবং পিত্ত লবণ কম হলে কোলেস্টেরল জমাট বেঁধে পাথর তৈরি করে।
- এটি সাধারণত উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার গ্রহণ বা বিপাকীয় সমস্যার কারণে হয়।
- পিত্তরসের স্থবিরতা:
- পিত্তথলি সঠিকভাবে খালি না হলে পিত্তরস জমা হয়, যা পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়ায়।
- দীর্ঘক্ষণ না খাওয়া, গর্ভাবস্থা বা ওজন কমানোর জন্য কঠোর ডায়েট এর কারণে হতে পারে।
- জিনগত কারণ:
- পরিবারে পিত্তথলির পাথরের ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বেশি।
- ঝুঁকির কারণ:
- লিঙ্গ: নারীদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে গর্ভাবস্থা বা হরমোন থেরাপির কারণে।
- বয়স: ৪০ বছরের বেশি বয়সে ঝুঁকি বাড়ে।
- স্থূলতা: অতিরিক্ত ওজন বা দ্রুত ওজন কমানো।
- খাদ্যাভ্যাস: উচ্চ চর্বিযুক্ত, কম ফাইবারযুক্ত খাবার।
- রোগ: ডায়াবেটিস, লিভারের রোগ, বা কিছু রক্তের রোগ (যেমন, সিকল সেল অ্যানিমিয়া)।
- অন্যান্য:
- কিছু ওষুধ (যেমন, কোলেস্টেরল-কমানো ওষুধ)।
- দীর্ঘদিন ইন্ট্রাভেনাস পুষ্টি গ্রহণ।
লক্ষণ:
- পেটের উপরের ডান দিকে বা মাঝখানে তীব্র ব্যথা।
- বমি বমি ভাব বা বমি।
- হজমে সমস্যা, বিশেষ করে চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার পর।
- জ্বর, জন্ডিস (যদি পাথর পিত্তনালীতে আটকে যায়)।
- অনেক ক্ষেত্রে কোনো লক্ষণ থাকে না (নীরব পাথর)।
চিকিৎসা:
পিত্তথলির পাথরের চিকিৎসা নির্ভর করে লক্ষণ এবং জটিলতার ওপর। বিকল্পগুলো হলো:
- পর্যবেক্ষণ:
- লক্ষণবিহীন পাথরের ক্ষেত্রে কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন নাও হতে পারে। নিয়মিত ফলোআপ করা হয়।
- ওষুধ:
- কোলেস্টেরল পাথর গলানোর জন্য Ursodeoxycholic acid (UDCA) ব্যবহার করা হতে পারে।
- এটি কার্যকর হতে অনেক সময় লাগে এবং শুধুমাত্র ছোট, নন-ক্যালসিফায়েড পাথরের ক্ষেত্রে কার্যকর।
- ব্যথা নিয়ন্ত্রণে ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া হতে পারে।
- অস্ত্রোপচার:
- কোলেসিস্টেকটমি: পিত্তথলি অপসারণ সবচেয়ে সাধারণ চিকিৎসা।
- ল্যাপারোস্কোপিক কোলেসিস্টেকটমি: কম আক্রমণাত্মক, দ্রুত পুনরুদ্ধার।
- ওপেন সার্জারি: জটিল ক্ষেত্রে প্রয়োজন হতে পারে।
- পিত্তথলি অপসারণের পর সাধারণত হজমে কোনো বড় সমস্যা হয় না।
- কোলেসিস্টেকটমি: পিত্তথলি অপসারণ সবচেয়ে সাধারণ চিকিৎসা।
- অন্যান্য পদ্ধতি:
- ERCP (Endoscopic Retrograde Cholangiopancreatography): পিত্তনালীতে আটকে থাকা পাথর অপসারণের জন্য।
- লিথোট্রিপসি: শব্দ তরঙ্গের মাধ্যমে পাথর ভাঙা (বিরল ক্ষেত্রে)।
প্রতিরোধ:
- স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা।
- ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া, চর্বিযুক্ত খাবার কমানো।
- নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া এবং দ্রুত ওজন কমানো এড়ানো।
- পর্যাপ্ত পানি পান করা।
পরামর্শ:
- লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- আল্ট্রাসাউন্ড বা সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে পাথর নিশ্চিত করা হয়।
- জটিলতা (যেমন, পিত্তথলির প্রদাহ বা প্যানক্রিয়াটাইটিস) এড়াতে দ্রুত চিকিৎসা জরুরি।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url