গ্লুকোমা: চোখের একটি ভয়ংকর রোগ

 

গ্লুকোমা: চোখের একটি ভয়ংকর রোগ যা সময়মতো না চিনলে চিরতরে দৃষ্টিশক্তি হারানোর ঝুঁকি থাকে

গ্লুকোমা (Glaucoma) চোখের এমন একটি নীরব ও ভয়ংকর রোগ, যা ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিতে পারে। অনেক সময় রোগী বুঝতেই পারে না, চোখে সমস্যা শুরু হয়েছে। একে "নীরব দৃষ্টিহন্তা" (Silent thief of sight) বলেও অভিহিত করা হয়।



গ্লুকোমা কী?

গ্লুকোমা হলো এমন একটি চক্ষু রোগ যেখানে চোখের ভেতরের চাপ (Intraocular Pressure) বেড়ে গিয়ে অপটিক নার্ভে (optic nerve) ক্ষতি করে। অপটিক নার্ভই চোখের ছবি বা চিত্রকে মস্তিষ্কে পাঠায়। এই নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হলে দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে শুরু করে।

গ্লুকোমার ধরণ

গ্লুকোমা প্রধানত দুই ধরনের hহয়ে থাকে:

  1. ওপেন-অ্যাঙ্গল গ্লুকোমা (Open-angle Glaucoma) – সবচেয়ে সাধারণ ধরণ। ধীরে ধীরে চোখের নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

  2. অ্যাঙ্গল-ক্লোজার গ্লুকোমা (Angle-closure Glaucoma) – এটি হঠাৎ করে শুরু হয় এবং খুবই ব্যথাযুক্ত হতে পারে। এটি একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি।

গ্লুকোমার লক্ষণ

গ্লুকোমা শুরুতে তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে যেমন:

  • পার্শ্ববর্তী (side vision) দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পাওয়া

  • চোখে ধোঁয়াটে ভাব

  • চোখে ব্যথা ও লালচে ভাব

  • আলোতে রঙিন বলয় দেখা

  • হঠাৎ দৃষ্টিশক্তি হ্রাস

গ্লুকোমার ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিরা

  • যাদের বয়স ৪০ বছরের উপরে

  • যাদের পরিবারে গ্লুকোমার ইতিহাস আছে

  • ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা চোখে আঘাত আছে

  • দীর্ঘদিন স্টেরয়েড ব্যবহার করেছেন

  • উচ্চ চোখের চাপ রয়েছে

গ্লুকোমা নির্ণয় ও চিকিৎসা

গ্লুকোমা নির্ণয়ের জন্য নিম্নলিখিত টেস্ট করা হয়:

  • টোনোমেট্রি (চোখের চাপ পরিমাপ)

  • অপটিক নার্ভ পরীক্ষা

  • ভিজ্যুয়াল ফিল্ড টেস্ট

  • গনিওস্কোপি

  • OCT (Optical Coherence Tomography)

চিকিৎসা নির্ভর করে রোগের ধরণ ও অবস্থার উপর। চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে:

  • চোখের ড্রপ

  • ওষুধ

  • লেজার থেরাপি

  • সার্জারি (যেমন ট্রাবেকুলেকটোমি বা শান্ট ইমপ্ল্যান্টেশন)

গ্লুকোমা থেকে বাঁচতে কী করবেন?

  • বছরে অন্তত একবার চোখের পূর্ণ পরীক্ষা করুন, বিশেষ করে যদি আপনি ঝুঁকিপূর্ণ দলে পড়েন

  • চোখে কোনো অস্বাভাবিকতা হলে দেরি না করে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন

  • ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন

  • সঠিকভাবে ও নিয়মিত ওষুধ ব্যবহার করুন


উপসংহার

গ্লুকোমা একটি নীরব এবং চিরস্থায়ী দৃষ্টিহানি সৃষ্টি করতে পারে, তবে সময়মতো ধরা পড়লে এটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য। সচেতনতা, নিয়মিত চোখ পরীক্ষা এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে গ্লুকোমা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। আপনার চোখের যত্ন নিন, কারণ একবার হারালে এই দৃষ্টি আর ফিরে পাওয়া যায় না।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url